ধ্বনি
ধ্বনি
উচ্চারণ ভিন্নতার জন্য বাংলায় ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে থাকে। সংস্কৃতে ধ্বনি পরিবর্তন উচ্চারণ বৈশিষ্ট্যের জন্য নয়, সন্ধির সূত্রানুসারে হত। কিন্তু বাংলা মূলত ধ্বনি পরিবর্ত্ন উচ্চারণ বিকৃতির কারণে ঘটে কিংবা উচ্চারণকে সহজ ও শ্রুতিমধুর করার জন্য ধ্বনি পরিবর্তন হয়। ধ্বনি পরিবর্তন এর কারণগুলি হল:
১. স্বরসঙ্গতি (Harmony)
আমাদের উচ্চারণের সময়, অনেক ক্ষেত্রে শব্দের ভিতরের একটি স্বরধ্বনি অপর স্বরধ্বনি দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর ফলে উভয় শব্দের ভিতরে স্বরধ্বনির একটি সমন্বয় সৃষ্টি হয়। এই সমন্বিত অবস্থাকেই বলা হয় স্বরসঙ্গতি। ধ্বনি পরিবর্তিত হওয়ার সময় পরস্পরের মধ্যে একটি সঙ্গতি আনার চেষ্টা করে বলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলা হয়। যেমন- কুড়াল>কুড়ুল, দেশি>দিশি, বিলাতি>বিলিতি, পুজা>পুজো। দুটি পৃথক স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে একই রকম হয়ে গেলে তাকে পূর্ণ স্বরসঙ্গতি বলে, যেমন- সুপারি>সুপুরি। স্বরসঙ্গতিতে অনেক সময় দুটি পৃথক স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে একই রকম স্বরধ্বনিতে রূপান্তরিত হয় না, প্রায় একই রকম বা কাছাকাছি স্বরধনিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তাকে আংশিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন- পুজা>পুজো
ভাষাতাত্ত্বিক রামেশ্বর শ'এর মতে স্বরসঙ্গতি তিন প্রকার-
স্বরসঙ্গতির প্রকৃতি অনুসারের একে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো প্রগত, পরাগত, মধ্যগত ও অন্যোন্য।
প্রগত (Progressive) : পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে পরবর্তি স্বরধ্বনি প্রভাবিত হলে তাকে প্রগত বলা হয়। যেমন -
ই অনুসরণে এ শিকা>শিকে (শ-এর সাথের ই ধ্বনির জন্য ক-এর সাথে এ যুক্ত হয়েছে।)
উ অনুসরণে ও মুলা>মুলো (ম-এর সাথের উ ধ্বনির জন্য ল-এর সাথে ও যুক্ত হয়েছে।)
পরাগত (Regressive) : পরবর্তি স্বরধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনি প্রভাবিত হলে তাকে পরাগত বলা হয়। যেমন-
ই অনুসরণে এ দেশি>দিশি। (দ-এর সাথের এ ধ্বনির পরিবর্তন ঘটেছে শেষের শ-এর সাথে যুক্ত ই-কারের জন্য।)
পারস্পরিক বা অন্যোন্য (Mutual/ Reciprocal) : যদি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী স্বরধ্বনি দুটিই পরস্পরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয় কিংবা কাছাকাছি স্বরধ্বনিতে রূপান্তরিত হয় তাহলে তাকে পারস্পরিক বা অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন- মোজা>মুজো, দেশি>দিশি।
1 review
Arup Das
28 Sep 2021
Good